রক্তনালি (পাঠ ৯-১০)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান পরিপাকতন্ত্র এবং রক্ত সংবহনতন্ত্র | - | NCTB BOOK
104
104

তোমার হাতের উপর দিক লক্ষ করলে দেখতে পারবে নীল রঙের এক ধরনের নালি দেখা যায়। এগুলো হলো শিরা। শিরা এক ধরনের রক্তনালি। রক্তনালি কী? যে নালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাকে রক্তনালি বলে।
আমাদের দেহে তিন ধরনের রক্তনালি আছে। যথা-
১. ধমনি
২. শিরা ও
৩. কৈশিকনালি।

১. ধমনি: যে সকল রক্তবাহী নালি হৃৎপিণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত বহন করে, তাকে ধমনী বলে। এরা দেহের ভিতর দিকে অবস্থিত। ধমনির প্রাচীর পুরু, গহ্বর ছোটো এবং এর গহ্বরে কপাটিকা থাকে না। ধমনি অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পরিবহন করে।

২. শিরা: যে সকল রক্তনালি দ্বারা দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে তাকে শিরা বলে। শিরা প্রাচীর অপেক্ষাকৃত পাতলা। এদের গহ্বরটি বড়ো ও গহ্বরের প্রাচীরগাত্রে কপাটিকা থাকে। দেহের কৈশিক জালিকা থেকে শিরার উৎপত্তি ঘটে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া শিরা সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত বহন করে।

৩. কৈশিকনালি: ধমনি ক্রমান্বয়ে শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত অতিসূক্ষ্ম নালি তৈরি করে। এই সকল সূক্ষ্মনালিকে কৈশিকনালি বা কৈশিক জালিকা বলে। কৈশিকনালি থেকে শিরার উৎপত্তি। এক স্তরবিশিষ্ট পাতলা এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে কৈশিকনালির প্রাচীর গঠিত। কৈশিকনালি দেহকোষের চারপাশে অবস্থান করে।

নিজেরা কর: তোমরা নিচের ছকটি পূরণ করে ধমনি ও শিরার পার্থক্য নির্ণয় কর।
উৎপত্তিধমনিশিরা
কপাটিকা
গহ্বর
প্রাচীর
অক্সিজেনের পরিমাণ
কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ

হৃৎপিণ্ড
হৃৎপিণ্ড বক্ষগহ্বরের বাম দিকে দুই ফুসফুসের মাঝখানে অবস্থিত একটি মোচাকৃতির অঙ্গ। এটা পেরিকার্ডিয়াম নামে দুই স্তরবিশিষ্ট একটি পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত। হৃৎপিণ্ড হৃৎপেশি দ্বারা গঠিত। হৃৎপেশি এক ধরনের স্বাধীন অনৈচ্ছিক পেশি, যা কারো নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নিজে নিজেই সংকোচন ও প্রসারণে সক্ষম। প্রতি মিনিটে কমবেশি ৭২ বার হৃৎপিন্ড সংকোচিত ও প্রসারিত হয়। তুমি তোমার বুকের মাঝখানে হাত রাখ। একটা ধুকধুকানি বা কোনো স্পন্দন টের পাচ্ছ কী? কেন এমন ঘটে? হৃৎপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে এইরূপ ঘটে। এটা হৃদস্পন্দন।

নিজেরা কর: তুমি ঘড়ি দেখে তোমার বন্ধুর হৃদস্পন্দন গণনা কর।

হৃৎপিণ্ড তিন স্তরে গঠিত। যথা- ক. বাইরের স্তর বা এপিকার্ডিয়াম খ. মাঝের স্তর বা মায়োকার্ডিয়াম এবং গ. ভিতরের স্তর বা এন্ডোকার্ডিয়াম। এদের মধ্যে মায়োকার্ডিয়ামই সবচেয়ে পুরু এবং এর সংকোচনের কারণে হৃৎপিন্ড পাম্প করে রক্ত সঞ্চালন করে।

হৃৎপিণ্ড একটি চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ফাঁপা অঙ্গ। হৃৎপিন্ডের উপরের প্রকোষ্ঠ দুটির নাম ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটি যথাক্রমে ডান ও বাম নিলয়। অলিন্দে প্রাচীর পাতলা ও নিলয়ের প্রাচীর পুরু থাকে। বাম নিলয়ের প্রাচীর অধিকতর পরু থাকে। অলিন্দ ও নিলয় দুটি আলাদা প্রাচীর দ্বারা পৃথক থাকে। আয়তনে অলিন্দগুলো নিলয়ের চেয়ে আকারে ছোটো হয়।

ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ডান অলিন্দ-নিলয় ছিদ্র থাকে। ঐ ছিদ্রপথে তিন কপাট বিশিষ্ট কপাটিকা থাকে। রক্ত এ ছিদ্রপথে অলিন্দ থেকে নিলয়ে প্রবেশ করতে পারে। অনুরূপভাবে বাম অলিন্দ ও নিলয়ের দুই কপাট বিশিষ্ট মাঝে কপাটিকা থাকে। এক্ষেত্রেও বাম অলিন্দ থেকে রক্ত কেবল মাত্র নিলয়ে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া মহাধমনি ও বাম নিলয়ের সংযোগস্থলে ও ফুসফুসীয় ধমনি এবং ডান নিলয়ের সংযোগস্থলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কপাটিকা রয়েছে। এ কপাটিকাগুলো রক্তের গতিপথ একদিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

নিজেরা কর: একদিন রফিকের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রফিকের বড়ো ভাই একজন ডাক্তার। ভাইয়া বাবার হাতের কবজির উপর হাত রেখে হাত ঘড়ি দেখছিলেন। রফিক বিষয়টি লক্ষ করল। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাইয়ার কাছে জানছে চাইল বাবার কবজির উপর হাত রেখে তিনি কী পরীক্ষা করছিলেন। হাতের উপরের দিকে যে রক্তনালিগুলি দেখা যায় ওগুলোকে কী বলে? ভাইয়া তার প্রশ্নের জবাবে বললেন, তিনি বাবার নাড়ির স্পন্দন দেখছিলেন। নাড়ি স্পন্দন কী? হৃৎপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে ধমনির মধ্যে যে স্পন্দন সৃষ্টি হয় তাকে নাড়ি স্পন্দন বলে। ধমনি থাকে দেহের ভিতরে আর শিরা থাকে দেহের উপরিভাগে।

এবার তুমি তোমার বন্ধুর নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা কর। তার হাতের শিরাগুলো পর্যবেক্ষণ কর। তোমার বন্ধু তোমার নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করবে। এবার তুমি স্কুলের মাঠে পাঁচ মিনিট দৌড়ে আস। তুমি তোমার বন্ধুকে তোমার নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করতে বলো। কোনো পরিবর্তন লক্ষ করছ কী? পরিশ্রমে হৃৎপিন্ডের সংকোচন-প্রসারণ বেড়ে যায় ফলে নাড়ির স্পন্দনও বৃদ্ধি পায়।

হৃৎপিন্ডের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন

হৃৎপিণ্ড হৃৎপেশি নামক এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত। যখন হৃৎপিন্ডের সংকোচন হয় তখন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনি পথে বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয়। আবার হৃৎপিন্ডে যখন প্রসারণ ঘটে তখন দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত শিরা পথে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। এভাবে হৃৎপিন্ডর সংকোচন ও প্রসারণ দ্বারা রক্ত একবার হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে আবার হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয়।

নতুন শব্দ: কপাটিকা, ধমনি, শিরা, কৈশিকনালি, অলিন্দ ও নিলয়

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion